গল্পঃমন_রাঙানোর_পালা লেখক:ইয়াসমিন_খন্দকার সুহাসিনী
আরাফাত অহনার বাসর রাত আজ। দুজনকে একসাথে একটি রুমে এসে বসানো হয়েছে। অহনা অনবরত কেঁদে চলেছে৷ আরাফাত কিছুক্ষণ চুপ থাকলেও একসময় বিরক্ত হয়ে বলল,"এভাবে কাঁদছ কেন তুমি? কান্না করার মতো কিছু তো হয়নি!"
অহনা কিছুটা থেমে বলে,"আমার জন্য আপনার মায়ের সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেল। এসবকিছুর জন্য আমি দায়ী!"
আরাফাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,"নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ করো। যাই হয়েছে সেখান তোমার কোন ফল্ট নেই। মায়ের বোঝার ভুল ছিল এবং সে মানুষের কথায় প্রভাবিত হয়ে একটু বেশিই করে ফেলেছে। তবে আমি জানি, মা বেশিদিন এভাবে রাগ করে থাকতে পারবেন না। এক না এক সময় ঠিকই আমাদের মেনে নেবেন। তাই তুমিও আর মন খারাপ করে থেকো না। বরং চলো, আমরা আমাদের বাসর রাত ইনজয় করি।"
আরাফাতের কথায় এবার বুঝি অহনা একটু লজ্জা পেল। লজ্জায় একদম মিইয়ে যেতে চাইল। কিন্তু আরাফাত তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। অহনার গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,"আজকের রাতটা আমাদের জীবনের সবথেকে বিশেষ রাত হতে চলেছে। তোমাকে কিন্তু একদমই ঘুমাতে দিব না।"
অহনা লজ্জায় মুখ লুকানোর চেষ্টা করে। আরাফাত অহনার মুখ তুলে বলে,"এত লজ্জা পাওয়ার দরকার নেই। তোমার সব লাজ আজ আমি ভাঙবো।"
আরাফাত এসব বলেই অহনাকে নিজের আরো কাছে টেনে নেয়৷ এই রাত সাক্ষী হয় তাদের পবিত্র ভালোবাসার।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজ আরাফাত, অহনা এবং অভিক সবাই সিলেটে ফিরে যাবে৷ থাকবে একা শুধু সুনীতি। এজন্য সুনীতির মন ভীষণ খারাপ। অভিক যখন কাপড় গোছাচ্ছিল তখন সে করুণ চোখে চেয়েছিল। অভিক সবটা দেখেও কিছু বলেনি। একদম চুপ ছিল। কাপড় গোছানো শেষ করে সুনীতিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে,"তুমি তো জানোই,,আমাকে আজ ফিরতেই হবে। আর এই অবস্থায় তো তোমাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারব না। তোমার এখন প্রোপার যত্নের প্রয়োজন।"
সুনীতি বিবেচকের মতো মাথা নাড়ায়। অভিক সুনীতিকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়ে বলে,"৩ মাস পর আমি আবার ফিরবো। তারপর তোমাকে একদম নিজের সাথে করে নিয়ে যাব।"
অভিকের কথায় সুনীতি কিছুটা হাসে। অভিকের বিদায়ের পালা আসে। আহসান চৌধুরী এবং রাহেলা খাতুনও আসেন। আহসান চৌধুরী এসে অভিককে বলে,"সাবধানে যাবে৷ নিজের খেয়াল রাখবে। বৌমার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না ওর খেয়াল রাখার জন্য আমরা আছি।"
আহসান চৌধুরীর কথায় অভিক আশ্বস্ত হয়। নিজের প্রিয়তমাকে ফেলে রওনা দেয়। এক বিচ্ছেদের গান যেন রচিত হয় এই স্থান থেকেই।
১ বছর পর,
অভিক ও আরাফাত ক্যাম্পে বসে একসাথে কিছুক্ষণ গল্প করছিল। আরাফাত কথায় কথায় বলে ফেলে,"আমি অহনাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত জানিস! মেয়েটাকে বোধহয় একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি। সবসময় ওর চিন্তা আমায় তাড়া করে বেড়ায়। এই যে দেশের জন্য আমি এত সংগ্রাম করি, আগে একটুও ভয় হতো না। মনে হতো, নিজের জীবন উৎসর্গ করে হলেও দেশের সেবা করে যাব। কিন্তু এখন চিন্তা হয় খুব, নিজের জন্য নয় অহনার জন্য। আমার কিছু হয়ে গেলে অহনার কি হবে?"
অভিক আরাফাতের কাধে হাত রেখে বলে,"তুই এসব নিয়ে একদম চিন্তা করবি না। আমি আছি তো, তোর কিছু হতে দেব না।"
"আর যদি আমার কিছু হয়ে যায়?"
তাদের কথার মাঝেই হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনীর নতুন সদস্য সাগর খান। সাগরেরও দায়িত্ব পড়েছে বর্তমানে সিলেটে। সে এসেই আরাফাত ও অভিককে স্যালুট দেয়। যদিও আরাফাতকে দেখে তার ভীষণ মন খারাপ হয়। কারণ এই মানুষটাই তার ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে। যাকে সে হাজার চেয়েও পায়নি৷ এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাগর। অভিক সাগরকে জিজ্ঞেস করেম,"এই তো ইয়াং ম্যান, তুমি কি কোন নতুন তথ্য নিয়ে এসেছ?"
"জ্বি, মেজর। আপনাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য আছে। আপনারা জানেন যে, সীমান্তে ইদানীং আবারো অনৈতিক কাজকর্ম বেড়ে গেছে। ইন্ডিয়ার কিছু স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনি ও বাংলাদেশের কিছু সন্ত্রাসীরা আবারো অস্ত্র পাচার এবং মাদক পাচারের গতি বাড়িয়েছে। যদিও অতীতে আপনারা শিহাবকে মেরে এই চক্রকে থামিয়ে ছিলেন কিন্তু বর্তমানে শিহাবের বাবা শমশের আলম আবারো নতুন করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং নিজের ছেলের হত্যার প্রতিশোধ নিতে সীমান্তে এসব অপতৎপরতা শুরু করেছেনম আগামীকালও তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশন আছে।"
আরাফাত বলল,"গুড জব, তোমরা আসলেই অনেক ভালো কাজ করেছ।"
অভিক বলে,"আমাদের এখনই উপরমহলে এসব তথ্য জানানো উচিৎ অতঃপর যারা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই হবে।"
এরইমধ্যে আরাফাতের ফোনে কল আসে। সে একটু সাইডে গিয়ে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আইডি পাসওয়ার্ড 30725267 ১১
সময়ও তারিখ ১৭/৯/২০২৪ ০৭:৩০ পিএম
সাগর বুঝে যায় আরাফাত অহনার সাথে কথা বলছে। এমনটা ভেবে তার বুকের বাঁ-পাশে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভূত হয়। তবে সাগর নিজেকে সামলে নেয়। আরাফাত অহনাকে বলে,"তুমি একদম চিন্তা করো না। আমি একটু পরেই উপস্থিত হচ্ছি। আজ তোমার জন্য আমি অনেক সুন্দর একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি।"
আরাফাতের এহেন কথা শুনে অহনা ভীষণ খুশি হয়। আরাফাতের উদ্দ্যেশ্যে বলে,"হুম, তুমি জলদি এসো। আমিও তোমার জন্য খুব সুন্দর একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি।"
আরাফাত ও অহনার এমন খুনশুটিময় কথা চলতেই থাকে।
সেদিনকার মতো কাজ শেষে যে যার ঠিকানায় রওনা দেয়। সাগর সেনাক্যাম্পেই থাকে। অপরদিকে আরাফাত ও অভিক থাকে কোয়ার্টারে।
অভিক কোয়ার্টারে উপস্থিত হয়েই একটি সুন্দর দৃশ্যের সম্মুখীন হয়৷ সুনীতি বসে বসে নিজের পেটে হাত বুলাচ্ছে এবং গুনগুন করে কিছু বলছে। অভিক সামান্য এগিয়ে আসে। সুনীতি অভিককে দেখেই বলে ওঠে,"দেখো সোনামণি, তোমার বাবা এসে গেছে।"
অভিক সুনীতির এহেন কথা শুনে মৃদু হাসে। সুনীতি বর্তমানে ৮ মাসের গর্ভবতী। খুব শীঘ্রই সে এ পৃথিবীর বুকে একটি নতুন প্রাণের সূচনা ঘটাতে চলেছে। অভিকও বাবা হবার খুশিতে আত্মহারা। সুনীতির কাছে এসে তার পেটে মাথা রেখে বলে,"সোনামণি কি তার বাবাকে মিস করছিল? এই তো চলে এসেছি আমি। আর মিস করার দরকার নেই।"
সুনীতি বলে,"আমাদের বেবি তোমার উপর রাগ করেছ। তুমি সকাল থেকে একটি বারের জন্যেও ওর খোঁজ নাওনি।"
অভিক বলে,"আমাদের বেবি এতটা অবুঝ না। ও জানে ওর বাবা কতটা ব্যস্ত মানুষ। কাল তো আবার আমাদের নতুন একটা মিশনে নামতে হবে।"
অভিকের মুখে মিশনের কথা শুনতেই সুনীতির বুকটা ধক করে ওঠে। যখনই অভিক কোন মিশনে যায় তখনই সুনীতির সাথে এমনটা হয়। সে ভীষণ ভয়ে পড়ে যায়। আজও ব্যতিক্রম হলো না। চিন্তিত স্বরে শুধালো,'আবার কিসের মিশন?'
অভিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,"শিহাবের বাবা শমশের আলম সীমান্তে আবারো নতুন করে অপতৎপরতা শুরু করেছে। এবার আমাদের তাকে ধরতে হবে।"
সুনীতির ভয় আরো বৃদ্ধি পায়। সে বলে,"আগেরবার তো ঐ শিহাবের জন্য তুমি মরতে বসেছিলে। আনিসা আপু নিজের জীবনের বলি দিয়ে তোমাকে রক্ষা করেছে। আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে। ঐ শিহাবের বাবাও নিশ্চয়ই অনেক ভয়ানক হবে।"
অভিক সুনীতিকে আশ্বাস দিয়ে বলে,"তুমি এতটা দুশ্চিন্তা করো না। আমি সবটা সামলে নেব।"
কিন্তু তবুও সুনীতির মন মানতে চায়না। সে বলে,"তোমার এই মিশনে না গেলে হয়না?"
"এটাই আমার দায়িত্ব নীতি।"
সুনীতি গাল ফুলিয়ে থাকে। অভিক বলে,"রাগ করো না।"
"আপনি যান। আমি আর আমার বেবি আপনার উপর রাগ করেছি। আপনি আমাদের কথা একটুও ভাবেন না।"
অভিক হালকা হাসে। সুনীতি যখনই রেগে যায় তখনই এভাবে অভিককে আপনি করে বলে। অভিক একটানে সুনীতিকে কাছে টেনে নিয়ে বলে,"তাহলে তো রাগ ভাঙাতে হয়!"
বলেই সুনীতির কপালে একটা চুমু খায়। ব্যস, সুনীতির সব রাগ বরফের মতো গলে যায়।
To be continue.......
Comments
Post a Comment